আমাদের দেশে কোমর ব্যথায় ভোগেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোমর ব্যথা আসলে খুবই কষ্টদায়ক কেননা, কোমর ব্যথা হলে ঠিকমতো বসা ,চলাফেরা করা যায় না এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমন অনেকেই আছেন যারা কোমর ব্যাথার কারণে ঠিকমতো বসতে পারেন না আবার বসলেও স্বাভাবিকভাবে উঠতে পারেন না ।তাই এই সমস্যায় যারা ভুগছেন দেরি না করে খুব দ্রুত এর সমাধান করা উচিত।
কোমর ব্যথা কমানোর সহজ কিছু উপায়
*আপনি যদি দাঁড়িয়ে কাজ করেন তাহলে কিছু সময়ের জন্য বসুন আর যদি বসে কাজ করেন তাহলে কিছু সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে অথবা একটু হাটাহাটি করে তারপর পুনরায় কাজ শুরু করুন।
*নরম বিছানায় ঘুমানো থেকে বিরত থাকুন। উপুর হয়ে ঘুমানো পরিহার করুন এবং ঘুমানোর সময় অবশ্যই ডান-কাত হয়ে ঘুমান।
*যেকোনো কাজ করুন না কেন চেষ্টা করুন ২০ মিনিট পর পর আপনার অবস্থান পরিবর্তন করার । এতে আপনার কোমরের উপরে চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
*শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ অতিরিক্ত ওজন কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ।
*দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বসে থাকবেন না আবার এক জায়গায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েও থাকবেন না। কারণ এতে কোমর ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
*ধূমপান পরিহার করুন
*মাটিতে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা পরিহার করুন।
*নিয়মিত কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমান।
*নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চার মধ্যে থাকলে কোমর ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।
সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করুন এবং পেশি শিথিল করার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিন।
কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম:
কোমর ব্যথা কমানোর কিছু সহজ ব্যায়াম রয়েছে। এই ব্যায়াম প্রতিদিন রাতেও সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করতে পারেন। নিচে কিছু ব্যায়ামের ধাপ দেয়া হলো:
১. সমতল হালকা নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের দুই পাশে রেখে দুই পা সোজা করে হাটুভাজ না করে এক পা উপরের দিকে তুলুন যতদূর সম্ভব। এভাবে ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে । একইভাবে অপর পা উপরে তুলুন এবং একই সময় নিন।
২. হাঁটু ভাজ না করে একসঙ্গে দুই পা তুলুন এবং একইভাবে ১0 সেকেন্ড ধরে রাখুন।
৩. এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করুন । এভাবে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। একইভাবে ওপর হাঁটু বুকে লাগানোর চেষ্টা করুন এবং একই সময় ধরে রাখুন।
৪. এবার একসঙ্গে দুই হাটু ভাঁজ করে দুহাতে জড়িয়ে বুকে লাগাতে চেষ্টা করুন এবং ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
৫. এরপর দুই পা সোজা করে পায়ের পাতার দিকে টান টান করে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এভাবে দিনে ২ বার অনুসরণ করুন।
৬. ইলাস্টিক স্ট্রেচিং খুবই ফলপ্রসূ কোমর ব্যথার জন্য।
৭. বিভিন্ন এরোবিক এক্সারসাইজ এর মাধ্যমেও ব্যথা অনেকটা সহনশীল হয়।
কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা:
কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক আপনার ব্যথাযর সঠিক কারণ ও রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। আজকাল কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। কারণ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সার্জারি বিহীন কোমর ব্যথা নিরাময় করা হয়। যেখানে ম্যানুয়াল কারেকশন টেকনিক, ম্যাকেনজি বিভিন্ন ফিজিক্যাল এজেন্ট ট্যাপিং , এমএফআর, সিরিয়াক্স , বিভিন্ন ইলেক্ট্রো থেরাপি, ম্যানুপুলেশন, লেজার প্রভূতি পদ্ধতির ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন এক্সারসাইজ যা কোমর ব্যথা নিরাময়ে সহায়তা করে। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করানো হয় যা কোমরের পেশিগুলোকে রিলিজ করে এবং বিভিন্ন স্ট্রেদনিং এক্সারসাইজ করানো হয় যা কোমরের দুর্বল পেশিগুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী হিট ও কোল্ড থেরাপি ব্যবহৃত হয়। ফিজিওথেরাপিস্ট আপনার কোমর ব্যথার কারণ সহ আপনার ব্যথা নিরাময় অবস্থানের উন্নতি কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যথা আবার ফিরে আসা প্রতিরোধ করতে পারেন।
পরামর্শ
কোমর ব্যথার কারণ ও তীব্রতার উপর ভিত্তি করে এই চিকিৎসা করা হয় । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কিছু ব্যথা উপশমকারী ওষুধ, ফিজিওথেরাপি এবং বিশেষ কিছু ব্যায়াম এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্র পাচাররের প্রয়োজন হয়। তবে ফিজিও থেরাপি ঔষধ এবং বিশেষ কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্যথা কমিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে অবশ্যই একজন গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছ থেকে নিতে হবে। মনে রাখবেন সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং জীবন যাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমেকোমর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে জটিলতা অনেকটাই এড়ানো যায়।
লিখেছেন
শারমিন হোসেন (পিটি)
ফিজিওথেরাপি কনসালটেন্ট
চেম্বার: আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬
হট-লাইন- ১০৬৭২
Website: https://aalokhospitalbd.com

