জ্বরের সাথে শরীর ও গিঁটে ব্যথা হওয়া বর্তমান সময়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা।এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়া জ্বর বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জ্বরের ভাইরাসএডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবোপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
ডেঙ্গু জ্বর :
ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। একে “হাড়ভাঙা ব্যথা” ও বলা হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
১. হঠাৎ উচ্চ জ্বর (১০১-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
২. তীব্র মাথাব্যথা
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা
৪. শরীরে ফুসকুড়ি
৫. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
৬. মাংসপেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা
যদি ডেঙ্গু সন্দেহে হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দুই-তিন দিনের মধ্যে টেস্ট করে জানতে হবে যে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা, যদি ডেঙ্গু হয়ে থাকে তাহলে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে ,তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। জ্বরের জন্য শুধুই প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে হবে এবং নারীর গতি ও রক্তচাপ মনিটর করতে হবে।প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হতে পারে।চিকিৎসা না করালে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা শক সিন্ড্রোম হতে পারে, যা মারাত্মক হতে পারে.। ডেঙ্গু ভালো হয়ে গেলে সাধারণত দুর্বলতা থাকে কিন্তু গিঁটে ব্যথা থাকে না।
চিকুনগুনিয়া :
চিকুনগুনিয়া জ্বর ও গিঁটে ব্যাথার একটা অন্যতম কারণ।আফ্রিকার আঞ্চলিক ভাষায় চিকুনগুনিয়ার মানে বাঁকা হয়ে যাওয়া। কারণ, এ রোগের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ব্যথা। বিশ্বব্যাপী মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এই ভাইরাস আবারও ২০০৪-০৫ সালের মতো বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিতে পারে। বিশ্বের ১১৯টি দেশের প্রায় ৫৬০ কোটি মানুষ বর্তমানে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই ভাইরাসে সংক্রমিত হলে
১. প্রচণ্ড জ্বর,
২. বমি বমি ভাব
৩. মাথাব্যথা
৪. শরীর দুর্বল
৪. শরীরে লাল র্যাশ
৫. সর্বশরীরে বিশেষ করে মাংসপেশি, মেরুদণ্ড বা অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা ৬) হাত পা ফুলে যায়– চলাফেরা কঠিন হয়ে যায়। আবার কিছু রোগী তীব্র গিঁটের ব্যথায় ভোগে, ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
শনাক্তকরণের পরীক্ষা
লক্ষণগুলো দেখে খুব পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই রোগ শনাক্ত করা যায়। CBC ও ৫-৭ দিন পর রক্তে IgM ও IgG অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়।
ব্যথা কত দিন স্থায়ী হয়
চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করে। শতকরা ১০ ভাগের কম রোগীর জ্বর চলে যাওয়ার পরও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট বা গিঁটে এবং মাংসপেশিতে প্রচণ্ড ব্যথায় ভোগে, যাদের স্বল্পসংখ্যক রোগী কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত মারাত্মক ব্যথায় ভুগতে পারেন।স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, চলাফেরা দারুন অসুবিধা হয়।
চিকুনগুনিয়া আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা:
একিউট স্টেজে উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। বিশ্রাম, পর্যাপ্ত তরল পান এবং ব্যথানাশক ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল) ব্যবহার করে জ্বর এবং ব্যথা কমানো যেতে পারে। ঠান্ডা সেঁক দিলে ফোলা ও ব্যাথা কমে ।কিছু ক্ষেত্রে, ফিজিওথেরাপি এবং অন্যান্য সহায়ক থেরাপিরও প্রয়োজন হতে পারে।
ক্রনিক আর্থ্রাইটিস হলে- ব্যথা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হলে-CRP, RA Test, AntiCCP Ab পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল , আইবি প্রফেন,ক্লোফেনাক ,শর্ট কোর্স স্টেরয়েড,
রোগ প্রতিরোধক ওষুধ (যেমন Methotrexate) এবং অন্যান্য ওষুধ যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ফিজিওথেরাপি:
ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে জয়েন্টের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা যায়। ফিজিওথেরাপিস্টরা কিছু ব্যায়াম এবং থেরাপির মাধ্যমে জয়েন্টের নড়াচড়া স্বাভাবিক করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করেন।
প্রতিরোধ:
১. এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ— ডেঙ্গুও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের প্রধান উপায়।
ক. বাড়ির ভিতর/বাহির/ছাদ এবং আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় পাত্রসমূহ ডাষ্টবিনে ফেলে দিন। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় এবং আঙ্গিনা পরিষ্কার রাতে হবে।
খ. সরকারী পর্যায়ে মশা নিধন অভিযান জোড়দার করা।
৩. ঘুমানোর সময় মশারীর নিচে ঘুমানো।
৪. বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ও ভিতরে থাকাকালীন মশার রেপেলেন্ট/ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
আসুন সবাই মিলে সতর্ক হই ও ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া থেকে পরিত্রাণ পাই।
– প্রফেসর ডা. এ. কে. এম. মূসা
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ , শাহবাগ ,ঢাকা
চেম্বার: আলোক হেলথকেয়ার ,মিরপুর -১০ ,ঢাকা
হটলাইন: ১০৬৭২
Website: https://aalokhealthcare.com

