ডেংগু একটি ভাইরাল জ্বর যা Aedes aegypti এবং Aedes albopictus নামের মশার কামড়া থেকে ছড়ায়। এই মশাগুলো দিনে ও রাতে উভয় সময় কামড়ায়, আর তারা সারাদিন সাধারণত জনবসতিপ্রধান এলাকায় ঘোরে । বিশ্বব্যাপী বছরে ৩৯০ মিলিয়ন সংক্রমণ, যার মধ্যে প্রায় ৯৬ মিলিয়ন ক্লিনিক্যাল সঠিকমতো ধরা পড়ে ।
লক্ষণ:
১. আকস্মিক উচ্চ জ্বর (৪০°C)
২. মাথা, চোখের পিছনে, পেশি ও জয়েন্টে বেদনাদায়ক ব্যথা
৩. বমি, ক্লান্তি, গায়ের লালচে ফুসকুড়ি
৪. র্যাশ, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক বা রক্তপাত– ধমনীতে চাপ কমে যেতে পারে → ডেংগু হেমোরেজিক শক
নির্ণয় ও চিকিৎসা:
১. রক্তপরীক্ষা: প্লেটলেট, হেমাটোক্রিট ও ভাইরাস শনাক্তকরণ
২. কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল নেই; মূলত সহায়ক চিকিৎসা—তাপমাপ, বিশ্রাম, তরলসার গ্রহণ, প্যারাসিটামল (অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন নয়)
সতর্কতা:
ডিহাইড্রেশন, প্লেটলেট কমে গেলে হাসপাতালের ভর্তি দরকার হতে পারে
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
১. ঘরে জল জমতে দেবেন না—বাক্স, টায়ার, ফুলের গামলা পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন
২. পোশাক ঢেকে পরুন, মশারি ও রেপেল্যান্ট ব্যবহার করুন
৩. সরকারি উদ্যোগ: One Health নজরদারিতে মশা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণ সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে
৪. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্যাথোজেন নিরীক্ষা (বিশেষ করে monsoon মৌসুমে) ও Wolbachia দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণে পার্থক্য প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ।
বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা:
২০২৫-এর আগাগোড়া দিনগুলোতে ৩,৯৭২ সংক্রমণ ও ২৩ জন মৃত্যু (২০২৪-এর ২,৮৫৩ সংক্রমণ ও ৪১ মৃত্যু) ।
ভালো খবর হলো মৃত্যুর হার কম, তবে সংক্রমণের পরিমাণ বেড়েছে। সাধারণত জুলাই–সেপ্টেম্বর সংক্রমণের ঋতু হলেও সম্প্রতি নভেম্বর–ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়ায় শেষ ধাপ দীর্ঘ হচ্ছে ।
২০২৩–তে দেশজুড়ে প্রায় ৩২১,১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি ও ১,৭০৫ মৃত্যু – যা বাংলাদেশে ডেংগুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড
ভবিষ্যৎ করণীয়:
১. দ্রুত তথ্যসংগ্রহ ও বিশ্লেষণ: ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো, প্লেটলেট হেল্পলাইন চালু
২. দ্রুত ডায়াগনস্টিক সুবিধা: প্রত্যন্ত ও গ্রামে ক্লিনিক স্থাপন
৩. ঝড়ের আগে প্রস্তুতি: monsoon শুরু থেকে সচেতনতা অভিযান, পরিষ্কারের দিন, ডেংগু ডে কর্মসূচি
বিকল্প প্রযুক্তি: Qdenga ও Dengvaxia ভ্যাক্সিন প্রয়োগ
ডেংগু মোকাবিলায় তিন স্তরের দায়িত্ব জরুরি: ব্যক্তিগত, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় পদক্ষেপ।
বাংলাদেশে সংক্রমণ বেড়েছে, তবে মৃত্যু হ্রাস এসেছে—এই ইতিবাচক মোড় অত্যন্ত সতর্কতার মাধ্যমে কার্যকর রাখতে হবে।
লেখক
ডা. নাজমুন নাহার
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
চেম্বার: আলোক হাসপাতাল লি.
হটলাইন: ১০৬৭২
Website: https://aalokhospitalbd.com

