মারাত্মক ছোয়াচে রোগ স্ক্যাবিস। যেটি এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারে রয়েছে। এটি একটি জাতীয় রোগে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই রোগির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। সঠিক চিকিৎসা এবং পরামর্শ ছাড়া এই রোগের প্রতিকার এবং প্রতিরোধ অত্যন্ত কঠিন।
স্ক্যাবিস ( খোস-পাঁচড়া) কি
স্কাবিস “সারকোপটিস স্ক্যাবিয়াই” (Sarcoptes scabiei) নামক এক প্রকার জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয়। এর প্রধান লক্ষণ হল শরীরে চুলকানি ও দানা বা বিচির মত র্যাশ ওঠা। যা স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তাছাড়া রোগীর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, বিছানার চাদর , বালিশ ব্যবহার করলে এ রোগ হতে পারে।
স্ক্যাবিস একটি অনুজীব, একটি ক্ষুদ্র পোকা যা খালি ছোখে দেখা যায় না। যার আক্রমণে চুলকানি সমস্যা সৃষ্টি হয়। স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়া সারা বছর-ই প্রজনন করতে পারে, তবে গরম ও আর্দ্র পরিবেশে তাদের প্রজনন দ্রুততর হয়। কারণ এই ধরনের আবহাওয়া তাদের বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য অনুকূল। এছাড়া, শরীরে সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে সহজে ছড়ায় বলে জনবহুল ও গরম স্থানে প্রজননের হার বেশি হতে পারে।
ত্বকের অনান্য সমস্যা যেমন- এলার্জি, একজিমা বা ছত্রাক সংক্রমণ থেকে আলাদা। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এই মাইট (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু) ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই জীবাণু মানুষের ত্বকের ঠিক নিচের অগভীর স্তরে বাস করে এবং দিনে দুই-তিনটা ডিম পাড়ে।
স্ক্যাবিসের লক্ষণ কি কি
১। প্রথমেই এটি পানিযুক্ত দানা বা বিচি হয় এবং যখন এটি চুলকানো হয় তখনই এটি দ্রুত শরীরে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়।
২। রাতের বেলা বেশি চুলকানি অনূভুত হয়।
৩। পরিবারের একজন সদস্য আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হয়ে থাকে।
৪। সাধারণত আঙ্গুলের ফাঁকে,ত্বকের ভাঁজে, বুকে-পিঠে,বগলে, যৌনাঙ্গে বা এর আশে-পাশে, নাভি ও নাভির চার দিকে ছোট ছোট দানা বা বিচি দেখা দেয় এছাড়াও সমস্ত শরীরে দেখা দিতে পারে।
৫। নবজাতক ও শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড়, মাথার তালু, মুখ, হাতের তালু ও পায়ের পাতার নিচেও হয়ে থাকে।
৬।অনেক সময় আক্রান্ত স্থানে ইনফেকশন যেমন পুজ, বা ব্যাথাও অনূভুত হতে পারে।
৭। স্কুল, মাদ্রাসা, মেস বা অনান্য আবাসিক স্থান যেখানে একত্রে একাধিক লোকজন থাকে সেখানে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়।
স্ক্যাবিস হলে করনীয়
১। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
২। পরিবারের যেকোনো সদস্য আক্রান্ত হলে পুরো সদস্য একত্রে চিকিৎসা নেওয়া।
৩। আক্রান্ত ব্যাক্তি ব্যবহৃত জামা-কাপড়, বিচানার চাদর, বালিশের কাভার, আন্ডার গার্মেন্টস সহ সবগুলো একত্রে গরম পানিতে ভিজিয়ে, রোদ্রে শুকানো।
৪। সম্ভব হলে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার না করা।
৫। রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্যতীত অন্যকারো পরামর্শে কোন ধরনের ওষুধ বা চিকিৎসা গ্রহণ না করা।
৬। আবাসিক হল বা মেস এ কেউ আক্রান্ত হলে অন্যত্র গিয়ে আলাদাভাবে চিকিৎসা নেওয়া।
৭।চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বা ব্যবহার করা পরিহার করা।
আমাদের মাঝে একটি ভূল ধারণা আছে যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে এই রোগের
সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত এটার পক্ষে কোন গবেষণা রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তাই বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক চিকিৎসা এবং পরামর্শ নিতে হবে।
স্ক্যাবিস হলে চিকিৎসা কি?
স্কাবিস হলে পরিবারের সকলের চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিৎ। সকলের বয়স এবং ওজন অনুযায়ি আলাদা আলাদা ওষুধ সেবন করতে হয়।
১। পারমিথিন ৫% ক্রিম এবং লোশন
২। মনোসালফিরাম সলিশন (Monosulfiram)
৩।ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ওষুধ।
৪। অনেক ক্ষেত্রে স্কীনে ময়েশ্চারাইজার দেওয়া হয়।
কি কি ক্ষতি হতে পারে স্ক্যাবিস হলে?
সঠিক সময়ে সঠিক রোগ(স্ক্যাবিস) নির্ণয় না হলে দীর্ঘদিন অপচিকিৎসা হলে রোগীর অনেক ধরণের শারীরিক এবং মানুষিক ক্ষতি হতে পারে।
রোগ শুরুর প্রারম্ভিকে অতি অল্প এবং প্রচলিত চিকিৎসায় স্ক্যাবিস ভালো হয় অন্যথায় চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষা করে রোগ নির্ণয় করে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন হয়।
স্ক্যাবিস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন,অপরকেও সুরক্ষিত করুন। আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিকভাবে চিকিৎসা এ সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য আপনার নিকটতস্থ চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন।
লেখক
এমবিবিএস, বিসিএস(স্বাস্থ্য), এমডি(ডার্মাটোলজি)
চর্ম, যৌন, এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ
লেজার ও এসথেটিক সার্জন
চেম্বার: আলোক হেলথ্কেয়ার, মিরপুর-পল্লবী শাখা
হটলাইন: ১০৬৭২
Website: https://aalokhealthcare.com

