Cathlab in modern hospital with doctor and patientCathlab in modern hospital with doctor and patient

হৃদরোগ চিকিৎসায় এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি

হৃৎপিন্ড একটি মাংসপিন্ড যার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা। শরীরের অন্যান্য মাংসপিন্ডের মতো হৃৎপিন্ডেও নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। করোনারী ধমনী নামক ৩টি রক্তনালী দিয়ে হৃৎপিন্ডে রক্ত সরবরাহ হয়। মাঝে মাঝে এই ধমনীগুলো বিভিন্ন কারনে সরু হয়ে যেতে পারে একেই করোনারী হার্ট ডিজিজ বলা হয়। করোনারী হার্ট ডিজিজ ফলে হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং  হৃৎপিন্ডে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে বুকে ব্যথা হয় যা পিঠ, কাঁধ, হাত বা গলায় ছড়াতে পারে এবং শ্বাসকষ্টও হতে পারে। একে এনজাইনা বলা হয়।

করোনারী এনজিওগ্রাম করোনারী হার্ট ডিজিজ নির্ণয়ের সফল প্রক্রিয়া। এই পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক ধমনীগুলোর সঠিক অবস্থা জানতে পারেন, যা সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ণয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ন।

এই পদ্ধতিতে উরু (ফেমোরাল আর্টারী) অথবা হাতের বাহু (রেডিয়াল আর্টরি)-তে ছোট ছিদ্র করে একটি সরু টিউব বা ক্যাথেটার রক্তনালীতে প্রবেশ করানো হয়। এই ক্যাথেটারের মাধ্যমে ডাই ইনজেক্ট করা হয় এবং এক্সরে মনিটরের মাধ্যমে ধমনীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

যে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সরু হয়ে যাওয়া ধমনী খুলে দেয়া হয় তাকে করোনারী এনজিওপ্লাস্টিকে  বা পিটিসিএ (পারকিউটেনাস করোনারী এনজিওপ্লাস্টি) বলা হয়। যার ফলে রক্ত চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং বুকে ব্যথা, শ্বাস কষ্ট কমে আসে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো যায়।

এনজিওপ্লাস্টি কেন করা হয়

প্রধানত দুটি কারণে এনজিওপ্লাস্টি করা হয়:

১. অ্যানজাইনা বা বুকে ব্যথা : করোনারি আর্টারির ভেতরে চর্বি জাতীয় পদার্থের পরিমাণ বেশি জমার কারণে সরু হয়ে গেলে বা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। কারণ হৃৎপিন্ডের মাংশপেশিগুলোতে

 রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, ফলে হৃৎপিন্ডের পেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ অবস্থায় এনজিওপ্লাস্টি করলে রোগীর হার্ট অ্যাটাক হবার আশংকা অনেকাংশে হ্রাস পায়।

২. হার্ট অ্যাটাক : হার্ট অ্যাটাককালীন এবং হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার পর হৃৎপিন্ডের পেশির ক্ষয় ক্ষতি কমানো এবং পুনরায় হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের জন্য এনজিওপ্লাস্টি করা হয়।

কীভাবে এনজিওপ্লাস্টি করা হয়

সমগ্র পদ্ধতিটি এনজিওগ্রামের মতো। এক্ষেত্রে ধমনীতে ক্যাথেটারের মধ্য দিয়ে একটি সরু তার বেলুন সহকারে প্রবেশ করানো হয়। সেই বেলুনটিকে করোনারি আর্টারির বøকের জায়গাতে নিয়ে গিয়ে ফুলিয়ে দেয়া হয়। বেলুনের চাপে সরু আর্টারি চওড়া হয়ে যায়। তখন সেখানে বিশেষ ধরনের মেটালের তৈরি একটি টিউব বা স্ট্যান্ট বসিয়ে দেয়া হয় যাতে ভবিষ্যতে রক্তনালী বন্ধ না হয়ে যায়। এভাবে আবার শরীরের রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসে।

মনে রাখবেন, হৃদরোগ চিকিৎসায় এনজিওপ্লাস্টি একটি নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি। এর মধ্যে সামান্য যে ঝুঁকি আছে, তা দুই’শ রোগীর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে হতে পারে।

ঝুঁকি সমূহ কি কি?

ঝুঁকি ছাড়া কোন কাজই হয় না, কিন্তু এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ন যে এনজিওগ্রাম হচ্ছে একমাত্র পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনার ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে আপনার পরবর্র্তীতে কি ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন-

১. ঔষুধ

২. এনজিওপ্লাস্টি

৩. বাইপাস সার্জারি

অধিকাংশ রোগীর (প্রায় ৯৯%) যাদের এনজিওগ্রাম করা হয় তাদের কোন সমস্যা হয় না।

এনজিওগ্রাম এবং এনজিওপ্লাস্টির ঝুঁকি সমূহঃ

১. কুঁচকিতে রক্তপাত । এটা সাধারনত যে স্থানে নলটি ছিল সেখানে চাপ দিয়ে ঠিক করা হয়।

২. পায়ের উপরিভাগে হালকা লাল হয়ে যাওয়া। এটা খুবই সাধারণ ঘটনা এবং সম্পূর্ণ ঠিক হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

৩. প্রচন্ড লাল যে যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল এবং এর জন্য ছোটখাট অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। এটা সাধারনত এক হাজার রোগীর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়।

৪. অনেকের ক্ষেত্রে এক্সরে ডাই থেকে এলার্জি জাতীয় সমস্যা হতে পারে, এ ব্যাপারে ডাক্তারকে অবহিত করা উচিত।

৫. খুবই কম ক্ষেত্রে, এই পদ্ধতিতে হৃৎপিন্ডের শিরার ক্ষতি হওয়া থেকে হার্ট এ্যাটাক হতে পারে। এনজিওগ্রামের এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল, এনজিওপ্লাস্টির ক্ষেত্রে ১%-২% হতে পারে। এই ধরনের সমস্যায় তাৎক্ষণিক বাইপাস অপারেশনের মাধ্যমে সমাধান করা হয়ে থাকে।

শুধুমাত্র এনজিওপ্লাস্টি/স্টেন্ট এর ঝুঁকি সমূহঃ

১. খুব কম সময়ই স্টেন্টের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে বন্ধ বা বøক করে দিতে পারে, ফলে রক্তের চলাচলে বাধা দেয়। শতকরা ১ ভাগেরও কম ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

২. শতকরা ০.৫ থেকে ১ ভাগ ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনী দিয়ে রক্তের চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন হয়। রোগীকে তাৎক্ষণিক ‘ক্যাথ ল্যাব’ থেকে ‘অপারেশন থিয়েটারে’ নিয়ে যাওয়া হয়। এই ধরনের অসুবিধা মোকাবিলাল জন্য অবশ্যই সে সব জায়গায় হৃৎপিন্ডের এনজিওপ্লাস্টি করা উচিত যেখানে বাইপাস অপারেশনের ব্যবস্থা আছে।

৩. কিছু কিছু ক্ষেত্রে এনজিওপ্লাস্টির পর হৃৎপিন্ডের ধমনী পুনরায় সরু হয়ে যেতে পারে, এটাকে বলা হয় ‘রিস্টেনোসিস’। সাধারণত এই সমস্যা প্রথম তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে  হয়। বর্তমানে উন্নত মানের ‘স্টেন্ট’ ব্যবহারের ফলে ‘রিস্টেনোসিস’  সমস্যা অনেক কম (প্রায় ১০%), এবং যাদের ‘মেডিকেডেড স্টেন্ট’ ব্যবহার করা হয় তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না বললেই চলে। যাদের ‘রিস্টেনোসিস’ হয় তাদের আবার ‘বেলুনীং’ অথবা ‘বেলুনীং ও স্টেন্ট’ এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে।

ক্ষতস্থানের পরিচর্চা

পদ্ধতিটি সম্পন্ন করার পর কিছুদিন কুঁচকি লাল হয়ে যাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। যদি নিম্মলিখিত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনার চিকিৎসককে জানান।

১. ক্ষতস্থানের চারপাথে ত্বকের নিচে রক্তের চাকা জমাট বাঁধা। এই জমাট যদি খুব ছোট মটরশুটির মতো হয় তাহলে কোন চিন্তার বিষয় নেই।

২. ব্যথা বেড়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, লাল হওয়া বা ক্ষতস্থান থেকে কিছু নিঃসৃত হওয়া।

৩. উচ্চ তাপমাত্রা বা জ্বর।

অপ্রীতিকর ঘটনার মাধ্যমে যদি আপনার কুঁচকি থেকে রক্তপাত শুরু হয় তাহলে আপনি শুয়ে পড়ুন এবং পা যথাসম্ভব সোজা রেখে রক্তপাতের স্থানে বেশ জোরে চাপ প্রয়োগ করুন। যদি ১০ মিনিটের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ না হয় তাহলে অবশ্যই অতি সত্তর আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন।

লেখক

ডা. এম শরীফুল আলম

কনসালটেন্ট, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

চেম্বার: আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-০৬

হটলাইন: ১০৬৭২

Website: https://aalokhospitalbd.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *