child eating

শিশুর পুষ্টি হচ্ছে একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে গৃহীত খাদ্য পরিপাক ও শোষিত হয় যেটা পুষ্টি যোগায় ,বৃদ্ধি সাধন  ও ক্ষয়পূরণ করে এবং সর্বোপরি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।

খাদ্য ও পুষ্টি হচ্ছে আমরা জীবন ধারণে যে খাদ্য খাই এবং খাবার পর যা পাই তাই পুষ্টি।

মায়ের গর্ভ থেকে শিশুর জীবন শুরু হয়। শিশুর জীবনের প্রথম এক হাজার দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় যাতে মায়ের পুষ্টি, খাদ্যে আয়োডিন ও মাইক্রো নিউট্রেন্ট এর অভাব না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন খনিজ পদার্থের অভাবে শিশুর খর্বকায় এবং আয়োডিনের অভাবে মেধাশূন্য হয়। শিশুরা বিভিন্ন ভিটামিন এবং আয়রনের অভাবে বিভিন্ন রোগে ভুগছে। তাই শিশুকে সবুজ, হলুদ ফলমূল খেতে দিতে হবে। বর্তমান সময় আমরা দেখতে পাই যে ফরমালিনের কারণে বাবা মা শিশুদের ফলমূল দিতে চিন্তায় পড়ে যায়। সে কারণে শিশুকে বেশী মাংস, দুধ, ডিম দেয়ার কারণে শিশুর ওজন বেড়ে যায়। শিশু অতিরিক্ত মোটা হয়ে যায়।

শিশু এবং কম বয়সী বাচ্চাদের খাদ্যভাসের আওতায় শিশুর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি, বিকাশ এবং সুস্বাস্থের জন্য জন্ম গ্রহণের ১ ঘন্টার মধ্যে যতদ্রুত সম্ভব বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে ছয় মাস (১৮০ দিন) পর্যন্ত বুকের দুধ দিতে হবে। অন্যকোন তরল খাবার এমনকি এক ফোটা পানি ও দেয়া যাবে না। এর দুই বছর পর এবং পরবতীর্তে পুষ্টি চাহিদা মেটানো ও বৃদ্ধির জন্য বুকের দুধের পাশাপাশি সময় উপযোগী ও পর্যাপ্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর পরিপূরক খাবার দিতে হবে। শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করানো থেকে পরিপূরক খাবার স্হানান্তর  এই প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা কম বয়সী শিশুদের বেচে থাকা, বুদ্ধির বিকাশ ঘটা ও বুদ্ধিমত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে শতকরা ২৫ ভাগের কম শিশু সঠিক পরিপূরক খাদ্য গ্রহন করে থাকে। সমীক্ষা অনুযায়ী  ২১% বাচ্চাদের ন্যূনতম গ্রহনযোগ্য খাদ্যভাস আছে। বাচ্চাদের খাবার হয় খুব দেরিতে বা খুব তাড়াতাড়ি শুরু করা হয় এবং অধিকাংশ সময় এর পুষ্টিমান অপর্যাপ্ত এবং তা স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে প্রস্তুত করা হয় না।

পরিপূরক খাদ্য কি

শুধুমাত্র বুকের দুধ শিশুর পুষ্টি চাহিদা সম্পূর্ন রুপে মেটাতে পারে না, তখন শিশুকে যে বাড়তি খাবার দেয়া হয় তাকে পরিপূরক খাদ্য বলে। ভালো মানের পরিপূরক খাদ্যে অধিক পরিমানে শক্তি, স্নেহ, আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের সংমিশ্রণ থাকে।

এই খাবার গুলোর বৈশিষ্ট্য

-পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর, নরম হতে হবে।

-সহজেই খেতে পারে এমন হতে হবে ।

-বেশী মসলাদার এবং লবনযুক্ত হওয়া যাবে না।

– সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

– খুব সহজেই তৈরি করা যাবে।

 -এই খাবার উপাদান গুলো সহজ প্রাপ্য এবং সহজলভ্য হবে।

শিশুর পাকস্থলী ছোট হওয়ার কারনে খুব বেশী পরিমাণে খেতে পারে না। তাই কিছুক্ষণ পরপর অল্প পরিমাণে খাবার দিতে হবে। সহজলভ্য বিভিন্ন রকম খাবার মিলিয়ে পুষ্টিকর খাবার তৈরী করতে হবে। পরিপূরক খাবারে ফলমূল ,খনিজ, আমিষ যোগ করে অনুপুষ্টির পরিমাণ বাড়িয়ে সুষম খাদ্য তৈরী করতে হবে।  শিশুর বৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জন্ম থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত এই সময়কাল শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ বুকের দুধ না খাওয়া এবং পরিপূরক খাবার না খেলে শিশুর পুষ্টি জনিত রোগ, সংক্রমণ জনিত রোগ, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, রক্তআমাশয় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শিশু পুষ্টির প্রয়োজনে করনীয়

১. নবজাতকের জন্মের পর পর শাল দুধ খাওয়াতে হবে।

২. শিশুকে প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ এবং পরবর্তী ২ বছর পর্যন্ত  বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার দিতে হবে।

৩. টিকা সময়মত প্রদান করতে হবে

৪. ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া থেকে মৃত্যু হার  কমাতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৫. আয়োডিনের অভাবে খর্বকায় এবং শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। তাই খাবার তৈরীতে আয়োডিন যুক্ত লবণ ব্যবহার করতে হবে।

শেষ কথা

বাচ্চার জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে ১ মিলিয়ন নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো হলে ১৩% , ৫ বছরের নীচের শিশুর মৃত্যু হার কম এবং সময়মত পরিপূরক খাবার পাশাপাশি ২ বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খেলে শিশু মৃত্যুহার ৬% কমে যায় । তাই এক কথায় বলা যায় যে শিশুর সুস্বাস্থ্য বুদ্ধি বিকাশ  ও মৃত্যুহার প্রতিরোধ করতে সঠিক খাদ্যভাসের ভূমিকা অপরিসীম।

লেখক

ডাঃ ইমনুল ইসলাম ইমন

অধ্যাপক ,শিশু বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

চেম্বার :আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার,মিরপুর ঢাকা

হটলাইন : ১০৬৭২

Website: https://aalokhospitalbd.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *