bells-palsy

আপনি সুস্থ্য মানুষ রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। প্রতিদিনের মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হওয়ার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছেন। দেখলেন,মুখটা একদিকে বেঁকে গেছে। চোখ পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। মুখে পানি নিয়ে ঠিক মতো কুলি করতে পারছেন না। এমন সমস্যা অনেকেরই দেখা দেয়। এই সমস্যাকে কি বলা হয়, কেন হয় আর এই সমস্যার চিকিৎসা এবং প্রতিকার জানবো।

বেলস পালসি বা ফেসিয়াল পালসি কি বা কাকে বলে?  

বেলস পালসি একটি নিউরোলজিক্যাল অবস্থা যা মুখের পেশীগুলির একটি অস্থায়ী দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস বুঝায়।এটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে ঘটতে পারে। এটি ঘটতে পারে যখন মুখের পেশী নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুটি ফোলা বা সংকুচিত হয়ে যায়৷ এই অবস্থার কারণে মুখের একপাশ ঝুলে যায় বা শক্ত হয়ে যায়৷ মুখের এক পাশ বেকে যায়। আমাদের মুখে ১২ জোড়া ক্রেনিয়াল নার্ভ থাকে,সেখানে ৭ নাম্বার ফেসিয়াল নার্ভ ড্যামেজ হয়, তাই এই রোগটাকে ফেসিয়াল পালসিও বলা হয়। যে কোন বয়সে হতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের হয় এবং গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৩% রোগী সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়।

বেলস পালসি কীভাবে ঘটে

বেলস পালসি সাধারণত ফেশিয়াল নার্ভে (যা চোখ, মুখ ও জিভের কিছু অংশের পেশী নিয়ন্ত্রণ করে) হঠাৎ করে প্রদাহ বা চাপ পড়ার কারণে ঘটে। এতে করে স্নায়ুটি ঠিকমতো সংকেত পাঠাতে পারে না, ফলে মুখের এক পাশ নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে।

বেলস পালসির কারনঃ

১ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া

২ ঠান্ডা বা হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন

৩ স্ট্রোক

৪ আঘাতজনিত কারন ভাইরাসজনিত সংক্রমণ (বিশেষত হার্পেস সিমপ্লেক্স ভাইরাস)

৫ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া

৬ ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি বেশি

৭ স্ট্রেস ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ

বেলস পালসির লক্ষনঃ  

  • মুখের এক পাশে হঠাৎ দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত
  • হাসলে একপাশ ঠিকমতো না ওঠা
  • চোখ পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া
  • মুখে অসাড়তা বা জ্বালাপোড়া অনুভব
  • কান বা জিভে ব্যথা
  • স্বাদ অনুভব কমে যাওয়া
  • অতিরিক্ত চোখের পানি পড়া বা শুকিয়ে যাওয়া
  • কথা বলায় সমস্যা
  • ভ্রু কুচকাতে সমস্যা

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

মুখের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করার জন্য কিছু ম্যানুয়াল এক্সারসাইজ করতে হয়। প্রোপ্রিয়োসেপ্টিভ নিউরোমাস্কুলার ফেসিলিলেটর টেকনিক ব্যবহার করা হয়। থেরাপিউটিক ম্যাসাজ, ফেসিয়াল নার্ভ মোবিলাইজেশন, স্থেথেন্থেনিং এক্সারসাইজ, মিমিক থেরাপি টেকনিক ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি ইলেক্ট্রোথেরাপি ব্যবহার করা হয়। যেখানে ইলেক্ট্রো নার্ভ স্টিমুলেটর, ইলেক্ট্রো আকুপাংচার ব্যবহার করা হয়।  

সতর্কতাঃ

এক্ষেত্রে রোগীর কিছু সতর্কতা ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। যেমন- ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া ও ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হয়। সরাসরি বাতাস না লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্টের তত্ত্বাবধায়নে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং পরামর্শে বাসাতেও কিছু ব্যায়াম করতে হয়।   

লেখক

মোঃ আব্দুল আলীম

বিপিটি (মেডিসিন ফ্যাকাল্টি- ডিইউ)

ডিপ্লোমা ইন অর্থোপেডিক মেডিসিন (বেলজিয়াম)

সার্টিফাই ইন নিউরোলোজিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন

বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্পোর্টস ইনজুরি ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ

চেম্বার: আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬

হটলাইন: ১০৬৭২

Website: https://aalokhospitalbd.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *