nutritionist-diet-chart

জীবনের এক নিষ্ঠুর মুহূর্ত বদলে দিতে পারে সবকিছু—আগুনে পুড়ে যাওয়া এমনই একটি দুর্ঘটনা। এটি কেবল একটি বাহ্যিক ক্ষত নয়, এটি শরীরের প্রতিটি কোষে এক ধাক্কা দেয়। শিশু হোক বা বড়, পোড়া রোগীর দেহ তখন যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র—বিপর্যস্ত টিস্যু, দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, ব্যাথা আর মানসিক যন্ত্রণায় ভরা এক লড়াই।

এ সময়টিতে রোগীর শরীর কেবল চিকিৎসাই চায় না, চায় উচ্চমাত্রার পুষ্টি। কারণ, জ্বালাপোড়ার পর শরীরের ক্যালরি চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়, প্রোটিন চাহিদা হয়ে দাঁড়ায় তিনগুণ। শুধু বাইরে থেকে মলম দিলেই হয় না, ভেতর থেকেও দিতে হয় শক্তি, নিরাময় ও পুনর্গঠনের উপাদান।

বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই চাহিদা আরও জটিল, কারণ তাদের শরীর এখনও বিকাশে রয়েছে। যদি খাবারের পুষ্টিগুণ সঠিক না হয়, তবে ত্বক সুস্থ হলেও শরীর ভেঙে পড়ে, কমে বৃদ্ধি, বেড়ে যায় জটিলতা।

এই নিবন্ধে আমরা জানবো – জ্বালাপোড়া আক্রান্ত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সঠিক পুষ্টি কীভাবে দ্রুত আরোগ্য এনে দিতে পারে, কোন খাবার সবচেয়ে বেশি দরকার, এবং কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

কী পরিমাণ প্রোটিন ক্যালরি দরকার?

অবস্থা      প্রোটিন চাহিদা                ক্যালরি চাহিদা

সাধারণ শিশু      ১.০–১.৫ গ্রাম/কেজি ওজন             ৯০–১০০ ক্যালরি/কেজি ওজন

পুড়ে যাওয়া শিশু (৫০–৬০%)    ২.৫–৩.০ গ্রাম/কেজি ওজন               ১২০–১৫০ ক্যালরি/কেজি ওজন

প্রাপ্তবয়স্ক            ১.২–১.৮ গ্রাম/কেজি ওজন             ৩০–৩৫ ক্যালরি/কেজি ওজন

প্রধান খাবার যা অবশ্যই রাখবেন:

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার:

•             ডিম (প্রতিদিন ৫-৬টি ডিমের সাদা অংশ)

•             দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (দই, ছানা, পনির)

•             মাছ, মুরগির মাংস, গরুর মাংস (চর্বিমুক্ত)

•             ডাল, সয়াবিন, বাদাম

•             প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট (চিকিৎসকের, পুষ্টিবিদের পরামর্শে)

উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার:

•             ঘি/তেল (সীমিত পরিমাণে)

•             সুজি, খিচুড়ি, পায়েস, মিল্কশেক, সাগু, বার্লি

•             কলা, আম, চিড়া, দুধ

ভিটামিন ও মিনারেল:

•             ভিটামিন C: কমলালেবু, পেয়ারা, টমেটো

•             জিংক: ডিমের কুসুম, বাদাম, সয়াবিন

•             আয়রন ও ফলিক এসিড: পালং শাক, কলিজা, ডাল

দিনে কয়েকবার খাওয়ানোর পরামর্শ:

•             রোগীকে নরম ও সহজপাচ্য খাবার দিন।

•             দিনে অন্তত ৫–৬ বার অল্প অল্প করে খাওয়ান।

•             খিচুড়ি বা ভাত-ডাল-মুরগির ঝোল সহজে হজমযোগ্য।

•             স্যুপ, দুধ, পুডিং দিয়ে উপস্থাপন করলে খাবার আগ্রহ বাড়ে।

•             দুধের সাথে খেজুর, বাদাম, কিসমিস, আম বা কলা দিয়ে মিল্কশেক দিতে পারেন।

•             প্রতি ২ ঘণ্টায় পানি, ফলের রস (বাসায় বানানো), নারকেল পানি, স্যুপ, ঘোল, ORS (পানি শূন্যতা থাকলে)দিতে পারেন।

যেসব খাবার এড়ানো উচিত:

•             ঝাল-মসলা খাবার

•             প্যাকেটজাত খাবার (চিপস, চকোলেট)

•             কোমল পানীয়

•             ধূমপানের পরিবেশ

•             ঠান্ডা বা বরফজাত খাবার

জ্বালাপোড়া রোগীদের সঠিক ও সময়োপযোগী পুষ্টি চিকিৎসার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর ও পরিকল্পিত খাদ্য ব্যবস্থা অনুসরণ করলেই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের জন্য আমার আজকের এই আর্টিকেল। সকল বাবা মা কে আল্লাহ্‌ ধৈর্য ধরার শক্তি দিন।

লেখক

ফারজানা ওয়াহাব

পুষ্টিবিদ, আলোক হাসপাতাল লি.

হটলাইন: ১০৬৭২

Website: https://aalokhospitalbd.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *