করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ বা কোভিড-১৯ একটি সংক্রামক ব্যাধি যা করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভ – ২) নামক এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। এ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ানক রোগ এবং অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ।এই ব্যাধিটি সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের প্রারম্ভে ব্যাধিটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বৈশ্বিক মহামারির রূপ ধারণ করে। ২০২৩ সালের সংক্রমণ কমতে থাকে ।চলতি বছর সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো করোনার নতুন দুটো সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি। যেগুলো ওমিক্রন জেএন.১ -এর একটি উপ-শাখা।সম্প্রতি যেসব নমুনা পাওয়া গিয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতে এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।প্রায় দেড় বছর পর আবারও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসায় জনমনে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চলতি বছর মোট ৫৮৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং এ রোগে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে ( ২৯ শে জুন পর্যন্ত)
করোনাভাইরাস একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ এবং একজন মানুষ থেকে আরেকজনে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে ।
করোনা ভাইরাস রোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা-:-
১)সংস্পর্শে আসার ২-১৪ দিন পরে লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে এবং তীব্রতা পরিবর্তিত হতে পারে।
২)কিভাবে COVID-19 ছড়ায় (ট্রান্সমিশন):-
এই রোগটি নাক বা মুখ থেকে ছোট ছোট ফোঁটার মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায়।সংক্রমিত হাত মুখ ,নাক ও চোখে লাগালেও আক্রান্ত হতে পারে।
৩)লক্ষণ–শুকনো কাশি -জ্বর – শ্বাসকষ্ট -গলা ব্যথা -ক্লান্তি -নাকে গন্ধ না পাওয়া।
নূতন ভ্যরিয়েন্ট (omicronXBB)এর ক্ষেত্রে- অস্থিসন্ধি ব্যাথা, মাথাব্যাথা , গলাব্যথা ,পিঠে ব্যাথা নিউমোনিয়ার লক্ষণ, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
৪)লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে-রেপিড এন্টিজেন পরীক্ষা , করোনা ভাইরাসের PCR পরীক্ষা,HRCTScan of chest করা হয়। চিকিৎসার জন্য CRP, D-Dimer, Procalcitonin ও আরো পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
পজিটিভ হলে করণীয় :
ক) বাসায় অবস্থান করতে হবে
খ) নিজেকে আইসোলেশনে (সঙ্গ নিরোধ) রাখতে হবে- জ্বর ছাড়ার ১ দিন পর পর্যন্ত।
গ) তার কাছ থেকে বাসার অন্য সদস্যরা দূরত্বে অবস্থান করবেন
ঘ) ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিভাইরাল ঔষধ সেবন। তাছাড়া প্যারাসিটামল ,কফ সিরাপ খাওয়া যেতে পারে।
ঙ) অন্য মানুষের সামনে মাস্ক পরবেন।
চ) একজন চিকিৎসার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন কিংবা স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নাম্বারে ফোন করে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেতে পারেন।
ছ) রক্তে অক্সিজেন মাত্রা- পালস অক্সিমিটার কাছে রাখুন ও অক্সিজেনের পরিমাণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন।
কখন হাসপাতলে যাবেন :
শ্বাসকষ্ট, শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, নিউমোনিয়া, অতিমাত্রায় কাশি, অতিমাত্রার জ্বর, শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া যাদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির রোগ, হার্টের রোগ রয়েছে, গর্ভবতী নারী তাদেরও হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।
বেশিরভাগ লোক (প্রায় 80%) বিশেষ চিকিত্সার প্রয়োজন ছাড়াই রোগ থেকে সেড়ে উঠেন।
চিকিৎসা :-
supportive-তরল ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, উচ্চমাত্রার অক্সিজেন, এন্টি বায়োটিক, ডেক্সামেথাসন,এন্টি ভাইরাল ঔষধ,রক্ত পাতলা রাখার ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।কিছু রোগকে ICU নিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন হয।
ICU তে চিকিৎসা -তীব্র জটিলতা:
নিউমোনিয়া,সেপসিস, ARDS,DIC, ছত্রাক সংক্রমণ, Multiorgan failure, রক্ত জমাট বাঁধা রোগ-অক্সিজেন যাদের বেশি প্রয়োজন তাদের আই সি ইউ চিকিৎসা প্রয়োজন। নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসার প্রয়োজন গুরুতর অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করনীয়:-
ক ) মাস্ক পরা: বদ্ধ এবং ভিড় রয়েছে এমন জায়গায় মাস্ক পরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খ) হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু, কাপড় বা বাহু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যু দ্রুত নিরাপদ স্থানে ফেলে দিন।
গ) নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা: সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে নিয়মিত হাত ধুয়ে নিন। সাবান না থাকলে অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
ঘ) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা: আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট (১ মিটার) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
ঙ) ভিড় এড়িয়ে চলা:।বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলা।
টিকা গ্রহণ:
কোভিড-১৯ এবং ফ্লু এর টিকা নিন, বিশেষ করে যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। টিকা সংক্রমণ এবং মারাত্মক রোগ ঠেকাতে সাহায্য করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং কার্যকর।
বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
লেখক
প্রফেসর ডা. এ. কে. এম. মূসা
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ , শাহবাগ ,ঢাকা
চেম্বার: আলোক হেলথকেয়ার ,মিরপুর -১০ ,ঢাকা
হটলাইন: ১০৬৭২
Website: https://aalokhealthcare.com

