লবণ শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইহা সুস্থ নিউরন এবং পেশী ফাংশন বজায় রাখার জন্য একটি অপরিহার্য খনিজ । ইহা শরীরের তরল নিয়ন্ত্রণ, এবং স্নায়ু আবেগ প্রেরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।যখন সোডিয়ামের মাত্রা খুব কম হয়, তখন কোষগুলি ফুলে যেতে পারে, যার ফলে বিভিন্ন উপসর্গ এবং জটিলতা দেখা দেয়। একজন সুস্থ মানুষের রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা 135 থেকে 145 মিলি সমতুল্য প্রতি লিটার (mEq/L) যখন আমাদের রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা 135 mEq/L-এর নিচে নেমে যায়, তখন এটাকে হাইপোনাট্রেমিয়া বলা হয়।
হাইপোনাট্রেমিয়ার তীব্রতা ও লক্ষণ
হালকা (Mild):রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা 130-134 mmol/L- কোনো উপসর্গ দেখা যায় না বা হালকা উপসর্গ হতে পারে।
মাঝারি (Moderate):সোডিয়ামের মাত্রা 125-129 mmol/L-এর মধ্যে এই অবস্থায় অলসতা, ক্লান্তিভাব এবং পেশী দুর্বলতা হতে পারে।
তীব্র (Severe):যখন সোডিয়ামের মাত্রা 125 mmol/L-এর নিচে নেমে গেলে গুরুতর সমস্যা যেমন বিভ্রান্তি, পেশী টান বা খিঁচুনি, এবং অজ্ঞান হতে পারে। যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
সোডিয়াম কমার হারের প্রভাব:
সোডিয়াম কমে যাওয়ার হারও হাইপোনাট্রেমিয়ার তীব্রতা ও উপসর্গের উপর প্রভাব ফেলে:
ধীর গতিতে হ্রাস (Slowly):যদি সোডিয়াম ধীরে ধীরে কমে (৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে),লক্ষণগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর হয়।
দ্রুত হ্রাস (Rapidly):সোডিয়াম যদি দ্রুত কমে যায় (যেমন – ১৬ ঘণ্টার মধ্যে), তাহলে তা মারাত্মক হতে পারে।, যা বিভ্রান্তি, খিঁচুনি এবং কোমার মতো গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করে।
হাইপোনাট্রেমিয়ার প্রকারভেদ ও কারণ:
অন্তর্নিহিত কারণ এবং শরীরের তরল এর পরিমাণের উপর ভিত্তি করে হাইপোনাট্রেমিয়াকে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা যেতে পারে:
১. পানি শূন্যতার সাথে হাইপোনাট্রেমিয়া (Hypovolemic)
কারন-বমি, ডায়রিয়া, বা অত্যধিক ঘাম. মূত্র বর্ধক ঔষধ সেবন ইত্যাদি।
২. স্বাভাবিক পানির সাথে হাইপোনাট্রেমিয়া(Euvolumic) অনুপযুক্ত অ্যান্টিডিউরেটিক হরমোন ক্ষরণ(SIADH) সিন্ড্রোমের মতো পরিস্থিতিতে দেখা যায়। মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের অসুখ ও ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারনে।
৩. শরীর ফুলে যাওয়ার সাথে হাইপোনাট্রেমিয়া (Hypervlumic) হার্টফেইলার, লিভার সিরোসিস, নেফ্রোটিক সিনড্রোম(কিডনির অসুখ)এর কারনে।
কি করনীয়:
রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস, ওষুধ গ্রহণের তালিকা পর্যালোচনা করা।
রোগীর ক্লিনিকাল পরীক্ষা করে পানি শূন্যতা ,পাফোলা ইত্যাদি আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করা।
রক্ত পরীক্ষা:-
সেরাম ইলেকট্রোলাইট,ক্রিয়েটিনিন,লিভার ফাংশন টেস্ট, হরমোন এনালাইসিস, ইউরিন ইলেক্ট্রোলাইট ইত্যাদি।
হাইপোনাট্রেমিয়ার চিকিৎসা:
এর তীব্রতা ও কারণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, তরল নিয়ন্ত্রণ, অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে শিরায় স্যালাইন (যেমন ৩% হাইপারটোনিক স্যালাইন) বা নরমাল স্যালাইন দিয়ে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ানো হয়। গুরুতর লক্ষণ বা খিঁচুনি হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া জরুরি।
চিকিৎসার ধরণ:
পানি শূন্যতার সাথে হাইপোনেট্রিমিয়া হলে IV স্যালাইন দিতে হবে। তরল খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।বমি,পাতলা পায়খানার চিকিৎসা করতে হবে।
ইউভোলিমিক হাইপোনাট্রেমিয়ার তরল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ৬০০ থেকে ১০০০ মিলি ২৪ ঘন্টায়।
অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা ,মুক্তবর্ধক ঔষধ ইত্যাদি।
হাইপার ভলুমিক হাইপোনেট্রিমিয়া –অন্তর্নিহিত রোগের চিকিৎসা, মূত্র বর্ধক ঔষধ,তরল নিয়ন্ত্রণ পটাশিয়াম স্পেয়ারিং ডায়াবেটিক।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
বয়স্ক মানুষের মধ্যে লবণ কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি । বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাত্র এক থেকে দুইবার বমি বা পাতলা পায়খানা হলে শরীরের এই লবণের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় ।যদি অস্বাভাবিক আচরণ কিংবা খিঁচুনি হয় তাহলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। মনে রাখবেন দেরিতে কিংবা যথাযথ চিকিৎসা না দিলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
প্রতিকার
১. পায়খানা বা অতিরিক্ত ঘাম হলে এবং আগে লবণ কমে যাওয়ার ইতিহাস থাকলে তাৎক্ষণিক স্যালাইন খেতে হবে।
২. উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীকে ও যদি বমি ও পাতলা পায়খানা হয় পর্যাপ্ত স্যালাইন খেতে হবে। এখানে সিদ্ধান্তহীনতার কিছু নেই ।
৩. হাইপোনেট্রিমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে নিতে হবে কেননা – স্ট্রোকের লক্ষণ প্রায় একই তাই নিশ্চিত হতে মস্তিষ্কের পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
৪. যাদের অনেকদিন ধরে হাইপোনেট্রিমিয়ায় ভোগেন পানি নিয়ন্ত্রণ করে খেতে হবে ও লবন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেজড খাবার (চিপস,ক্যানড স্যুপ,ইনস্ট্যাট নুডলস নোনতা স্ন্যাকস (পিৎজা, আচার,লবণ দেওয়া বাদাম) পনির, মাখন,নোনতা ডেয়ারি পন্য এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস (পরিমিত পরিমাণে)খাওয়া যেতে পারে।
৫. দ্রুত সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ালে মস্তিস্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাই সবসময় আস্তে আস্তে লবন বাড়াতে হবে-বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা করা উচিত।
লেখক
প্রফেসর ডা. এ কে এম মূসা
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর -১০, ঢাকা
হটলাইন: ১০৬৭২
Website: https://aalokhealthcare.com

