fever-affected-child

চলছে জ্বরের মৌসুম। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস সহ নানা ধরণের ভাইরাস জ্বরে এখন শিশুরা ও বড়রা আক্রান্ত হচ্ছে। গত ২৭/৮/২০২৫ তারিখে পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ২৯৯৪৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১১৮ জন। এডিস মশা এককভাবে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের বাহক।

লক্ষণসমূহ

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে:

১. হালকা জ্বর থেকে তীব্র জ্বর হতে পারে।

২. র‌্যাশ।

৩. মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা ও শরীরে ব্যথা হতে পারে যা এতোটাই তীব্র যে হাড্ডি ভাঁঙ্গা ব্যথার জ্বর নামে পরিচিত।

৪. শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

৫. রক্তচাপ কমে গিয়ে শিশু শক এ চলে যেতে পারে।

৬. এর সাথে পেট ব্যথা সহ বমি হতে পারে।

চিকনগুনিয়ার জ্বরের ক্ষেত্রে:

১. জ্বরের সাথে র‌্যাশ হতে পারে।

২. গোঁড়ালী, হাটু, হাত ও পা ব্যথা ও ফোলা হতে পারে।

৩. শরীর ব্যথার কারণে হাঁটতে, বসতে, চলতে অসুবিধা হতে পারে। এজন্য এটি ল্যাংড়া জ্বর নামেও পরিচিত।

জিকা ভাইরাস জ্বরের ক্ষেত্রে:

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তেমন কোন লক্ষণ থাকে না তবে থাকলেও সেটা হয় হালকা ধরণের। যেমন- জ্বর র‌্যাশ, চোখ লালচে, মাথা ব্যথা, মাংসপেশী, গিরা ব্যথা হতে দেখা যায়। তবে এই ভাইরাস যদি গর্ভবতী মাকে আক্রান্ত করে তখন গর্ভজাত শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখতে পাওয়া যায়।

নির্ণয়:

প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস সহ অন্যান্য ভাইরাস জ্বর সনাক্ত করা সম্ভব হয়। সেই সাথে জ্বরের ধরণ বুঝে চিকিৎসক আরও পরীক্ষা-নীরিক্ষা যেমন- বুকে এক্স-রে এবং পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ অন্যান্য কিছু পরীক্ষা করিয়ে থাকে।

কখন বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে

১. বমি বা পাতলা পায়খানা হলে।

২. পেটে ব্যথা।

৩. রক্তকণিকা বা প্লেটলেট কমে গেলে।

৪. বাচ্চা নেতিয়ে পড়লে।

৫. পেটে, ফুসফুসে পানি আসলে।

চিকুনগুনিয়া জ্বরের ক্ষেত্রে এই সব ঝুকি না থাকলেও গিরা ব্যথা এবং ফোলার মেয়াদ দীর্ঘ হয়।

চিকিৎসা

জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা মূলত হলো প্যারাসিটামল। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে তরল খাবার যেমন- স্যূপ, ডাবের পানি, ফলের রস বার বার এই সময় রোগীকে দিতে হবে। সাথে সাথে পেট ব্যথা, বমি ও অন্যান্য উপসর্গের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চিকিৎসকরা নিয়ে থাকেন।

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে যেহেতু প্লেটলেট বা ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ফলোআপ করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের স্যালাইন, অনেক সময় অ্যালবুমিন, প্লেটলেটও দেয়া লাগতে পারে।

তাই জ্বর হলে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে দ্রুত জ্বরের কারণ সনাক্ত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। আমাদের সতর্ক হতে হবে এসব জ্বর প্রতিরোধে। তাই এডিস মশার বিস্তার হতে দেয়া যাবে না। ডাবের খোসা, টবে জমে থাকা পানি, টায়ারের পানি বা যে কোন জায়গায় পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না। সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক

ডা. মৌসুমি আহমেদ মৌরী

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ

চেম্বার: আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬

হটলাইন: ১০৬৭২

Website: https://aalokhospitalbd.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *