head injured child

প্রাকৃতিক ভাবেই চঞ্চল ও অনুসন্ধিৎসু শিশুরা, খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ, রাস্তায় দুর্ঘটনা অথবা একা চলাফেরা করতে গিয়ে প্রায়ই তারা পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। শিশুদের মাথায় আঘাত একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এবং জরুরী স্বাস্থ্যসেবার আওতায় পরে। এটি শুধু তাৎক্ষণিক ঝুঁকি নয়, দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা এবং মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। তাই অভিভাবকদের উচিত মাথায় আঘাতের প্রাথমিক লক্ষণ, বিপদের ইঙ্গিত এবং করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকা।


মাথায় আঘাতের কারণ
শিশুরা বিভিন্ন কারণে মাথায় আঘাত পেতে পারে। যেমন: খেলার সময় পড়ে যাওয়া, বিছানা বা সোফা থেকে গড়িয়ে পড়া, সিঁড়ি থেকে পিছলে যাওয়া, অথবা টেবিল, চেয়ার কিংবা দেয়ালে মাথা লাগা, রাস্তায় যানবাহনের ধাক্কা, শিশুর প্রতি নির্যাতন বা অবহেলা। কিছু শিশু আবার হাঁটতে শেখার সময় বার বার পড়ে যায়, তখন মাথায় আঘাত লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়।


আঘাতের লক্ষণ ও গুরুত্ব
সব আঘাত একরকম নয়। শিশুদের মাথার আঘাত হতে পারে হালকা চোট থেকে শুরু করে কনকাশন (মাথা ঝাঁকুনি), খুলি ফাটল, এমন কি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত। আঘাতের ধরন ও তীব্রতা অনুযায়ী উপসর্গ বিভিন্ন হতে পারে।
১. মৃদু আঘাত:
হালকা ফুলে যাওয়া, চামড়ায় একটু কেটে যাওয়া বা সামান্য ব্যাথা হতে পারে। সাধারণত শিশুর চেতনা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং স্বাভাবিক আচরণ করে।
২. মধ্যম থেকে গুরুতর মানের আঘাত:
একাধিক বার বমি, মাথা ব্যথা, ঝিমুনি ভাব, চোখের পাতা অসমান হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের কোনো অংশে দুর্বলতা বা দীর্ঘ সময় অচেতন থাকা ও অস্বাভাবিক আচরণ করা।

মাথায় আঘাতে ঝুকিপূর্ণ শিশু
– শিশুর মস্তিষ্ক নরম ও সংবেদনশীল।শিশুদের মাথার খুলিরহাড় পূর্ণাঙ্গভাবে শক্ত না হওয়ায় মস্তিষ্ক সহজে আঘাত প্রাপ্ত হয়।
– গুরুতর আঘাত মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বিঘ্ন ঘটাতে পারে, যার ফলে স্মৃতি ভ্রষ্টতা,বুদ্ধিমত্তা হ্রাস বা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
-কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত শিশুর মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

বিপদের লক্ষণ

নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
– একাধিক বার বমি
– চেতনা হারানো বা অত্যন্ত ঘুম ঘুম ভাব
– কান, নাক বা মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়া
– খিঁচুনি
– শরীরের কোনো অংশ নড়া চড়া না করা
– দৃষ্টি বিভ্রান্তি বা অস্বাভাবিক আচরণ

-তীব্র মাথা ব্যথা

-খুলির হাড়ে ফাটল

– শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা

প্রাথমিক চিকিৎসা

প্রায়ই দেখা যায় আঘাত লাগার পর শিশুটি বাইরে থেকে মোটামুটি সুস্থ দেখাচ্ছে, তাই অনেক বাবা-মা সেটিকে গুরুত্ব দেন না। অনেক সময় তৎক্ষণাৎ কোনো লক্ষণ বোঝা নাও যেতে পারে তাই আঘাতের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা শিশুকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। ব্যথা ও ফোলাভাব কমানোর জন্য পরিস্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে মাথায় বরফ এবং প্যারাসিটামল ঔষধ দেওয়া যেতে পারে।বমি হলে বমিরঔষধ দেওয়া যেতে পারে। যদি রক্তপাত হয়, পরিষ্কার গজ বা কাপড় দিয়ে চেপে ধরা উচিত।গুরুতর বিপদ চিহ্ন দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।


প্রতিরোধের উপায়
বাড়িতে বা স্কুলে শিশুদের খেলার জায়গা নিরাপদ রাখা

– সাইকেল, স্কেটিং বা খেলাধুলার সময় হেলমেট পরা বাধ্যতা মূলক করা
– ছোট বাচ্চাদের সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা
গাড়িতে ভ্রমণের সময় সিটবেল্ট ব্যবহার করা

– শিশুদের সড়ক নিরাপত্তা ও খেলা ধুলার নিয়ম শেখানো

স্কুল ও খেলাধুলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা ও আঘাত শনাক্ত করার প্রশিক্ষণ থাকা উচিত।

শিশুদের মাথায় আঘাত কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। সচেতনতা, সতর্কতা এবং দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে এর ভয়াবহ তা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এটি সময় মতো সনাক্ত ও চিকিৎসা না পেলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাই সচেতনতা, প্রতিরোধ এবং জরুরি পদক্ষেপই হতে পারে শিশুর জীবনের নিরাপত্তার চাবিকাঠি।

লেখক

ডাঃ ইমনুল ইসলাম ইমন

অধ্যাপক, শিশুবিভাগ

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

চেম্বার: আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর -৬ ঢাকা

হটলাইন: ১০৬৭২

Website: https://aalokhospitalbd.com

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *