স্থূলতা বা ওবেসিটি একটি দীর্ঘ মেয়াদি রোগ। এটা উপক্ষিত এবং অবমূল্যায়িত যা বিশ্বব্যাপী মানুষকে প্রভাবিত করে । এক্ষেত্রে শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত চর্বি জমা হয় ফলে স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পরে, আয়ু কমে যেতে পারে এবং শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। শৈশব কালীন স্থূলতা ক্রমবর্ধমান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একবংশ শতাব্দীর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। শহরের শিশুদের এবং ছেলে শিশুদের মধ্যে স্থূলতার পরিমান বেশী। পাঁচ থেকে উনিশ বছর বয়সের শিশু ও কিশোরদের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন অতিরিক্ত ওজন অথবা স্থূলতা বিদ্যমান তন্মধ্যে ১৬০ মিলিয়ন স্থূলতায় আক্রান্ত।
বাংলাদেশে স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজন যথাক্রমে ১৬% এবং ২৮%। গড়ে প্রায় শতকরা ৭০%-৮০% শৈশবকালীন স্থূলতা পরবর্তীতে প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় স্থূলতায় ভোগে। বডি মাস ইন্ডেক্স (বিএমআই) এর মাধ্যমে শিশুদের স্থূলতা নিরূপন করা হয়। অতিরিক্ত ওজনের ক্ষেত্রে বিএমআই ৮৫-৯৫ পার্সেন্টাইলের মধ্যে এবং স্থূলতার ক্ষেত্রে বিএমআই ৯৫ পার্সেন্টাইলের বেশী থাকে। প্রায় ৯০% ক্ষেত্রে শৈশবকালীন স্থূলতার ঝুঁকির সমূহ অতিরিক্ত শর্করা এবং চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ, দীর্ঘ সময় বসে বা শুয়ে থাকা, হাঁটাচলা কম করা, পিতা মাতার স্থূলতা, শহরকেন্দ্রিকতা, একমাত্র সন্তান, কোটাজাত দুগ্ধ ও জাংক ফুড, মোবাইলে আসক্তি এবং শরীরচর্চার অভাব। প্যাথলজিক্যাল স্থূলতার কারনসমূহ হাইপোথাইরয়েড, হাইপোথেলামাসের সমস্যা, স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন, জেনেটিক এবং সিনড্রোমিক সমস্যা। স্থূলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ভিটামিন-ডি এর স্বল্পতা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, মেটাবলিক সিনড্রোম, রক্তে চর্বির আধিক্য, লিভারে চর্বি জমা হওয়া, কিডনি এবং চোখের সমস্যা। এছাড়া স্কুলে বা কলেজে উপহাসের সম্মুখীন হয় ফলে পড়াশুনায় পিছিয়ে যায়, হীনমন্যতায় ভোগে ও মানসিক সমস্যা তৈরী হয়। শৈশবকালীন স্থূলতার প্রধান চিকিৎসা জীবন ধারা পরিবর্তন, ঔষধ এবং সার্জারী। জীবন ধারা পরিবর্তনে খাদ্যাভাস পরিবর্তন, শরীরচর্চা ও মানসিকতার পরিবর্তন অন্যতম। খাদ্যাভাসের পরিবর্তন বলতে শর্করা জাতীয় খাদ্য কম গ্রহণ, পূর্বের তুলনায় ৩০% – ৪০% কম ক্যালরি গ্রহণ এবং নিয়মিত অল্প অল্প খাদ্যগ্রহন অন্যতম। খাবার গ্রহণের আধাঘন্টা আগে পানি পান, বাসায় তৈরি খাবার গ্রহণ, জাংক ফুড এবং কোমল পানীয় বর্জন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। ভিটামিন ডি, ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বি কমানোর এবং উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ প্রয়োজন বোধে গ্রহন করতে হবে। শৈশবকালীন স্থূলতা প্রতিরোধের জন্য পরিমিত খাদ্যাভাস, নবজাতক ও শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান, সঠিক পরিমানে ঘুমানো (৬-৮ ঘন্টা) এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। জাংক ফুড ও অত্যাধিক মোবাইল ব্যবহার পরিহার করতে হবে। দুই বছরের কম বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে মোবাইল, টেলিভিশন এবং কম্পিউটার দেখা অনুচিৎ, দুই থেকে বার বছর বয়সের শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে এক ঘন্টা এবং বার বছর বয়সের বেশী কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে দুই ঘন্টার বেশী নয়। শরীরের মেদ কমানোর জন্য প্রতিদিন ৩০-৬০ মিনিট মাঝারি ব্যয়াম যেমন দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং, সাইক্লিং, সাতার কাটা ইত্যাদি সপ্তাহে পাঁচ দিন করা উচিৎ। অত্যাধিক স্থূলতা এবং শারীরিক জটিলতা বিদ্যমান থাকলে সার্জারীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শৈশবকালীন স্থূলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ব্যাপারে সচেতন না হলে শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন মারাত্বক হুমকির সম্মুখিন হবে। এই সমস্ত রোগীদের চিকিৎসার মাধ্যমে ওজন কমিয়ে সুস্থ রাখা সম্ভব। সময়মত চিকিৎসা নিলে স্থূলতা জনিত সমস্যা হতে মুক্ত হয়ে সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।
অধ্যাপক ডাঃ সুরাইয়া বেগম
Website: https://aalokhospitalbd.com

