cpr-guide-chest-compressions-body-position

অনেক মানুষের আকস্মিক মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কতটা অপ্রত্যাশিত হতে পারে। জ্ঞান হারানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে নেওয়া হলেও, অনেক সময়ই চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই অল্প সময়ের ব্যবধানে একটি কার্যকর ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেলে, হয়তো ফলাফল ভিন্নও হতে পারত। এই চিকিৎসা পদ্ধতির নাম সিপিআর (CPR)- কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন।

কেউ যদি হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় বা হৃদস্পন্দন থেমে যায়, তখন দ্রুত সিপিআর প্রয়োগ করলে তিনি ফিরে পেতে পারেন নতুন জীবন, হয়ে উঠতে পারেন আবার সুস্থ্য।

কেন শিখবেন সিপিআর?

১. জীবন-মৃত্যুর মাঝে সময় খুব কম—মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিট।

২. এই সময়ের মধ্যে সিপিআর দিলে রক্ত ও অক্সিজেন সঞ্চালন শুরু হয়

৩. চিকিৎসক আসার আগেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন একজন লাইফসেভার।

৪. বিশ্বের বহু দেশে স্কুল থেকেই এটি শেখানো হয়—বাংলাদেশেও এই বিষয়ে সচেতনতা জরুরি

কখন সিপিআর দিতে হয়?

১. হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলে

২. শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ থাকলে

৩. হৃদস্পন্দন বন্ধ হলে

৪. পানিতে ডুবে যাওয়ার পর

৫. বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বা দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পেলে

সিপিআরের ৭টি ধাপ (CPR Step-by-Step Guide)

১. পরিস্থিতি ও পরিবেশ যাচাই করুন, প্রথমেই নিশ্চিত হোন আপনি এবং ভুক্তভোগী—উভয়েই নিরাপদ জায়গায় আছেন কি না।

যেমন: আগুন, ট্রাফিক, বিদ্যুৎ বা গ্যাস লিক ইত্যাদি ঝুঁকি থাকলে আগে সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে আসুন।

২. সাড়া বা জ্ঞান আছে কিনা পরীক্ষা করুনঃ  ভুক্তভোগীর কাঁধে হাত দিয়ে জোরে জোরে বলুন: “আপনি কি ঠিক আছেন?” কোনো নড়াচড়া, চোখের পলক বা সাড়া না পেলে ধরে নিন সে অচেতন।

৩. জরুরি নম্বরে কল করুন (৯৯৯)- সঙ্গে কেউ থাকলে তাকে বলুন জরুরি সেবায় কল দিতে এবং AED (যদি থাকে) নিয়ে আসতে। আপনি একা থাকলে, ফোনে স্পিকার অন করে CPR শুরু করুন এবং একসঙ্গে সাহায্যের জন্য ডাকুন।

৪. ভুক্তভোগীকে চিৎ করে শুইয়ে দিন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করুনঃ  ভুক্তভোগীকে শক্ত সমতল জায়গায় চিৎ করে শুইয়ে দিন। মাথা সামান্য পেছনে ঠেলে, চিবুক উঁচু করে নাক-মুখের কাছে মুখ রাখুন। ৮–১০ সেকেন্ড পর্যবেক্ষণ করুন:

– বুক উঠছে কি না

– নিঃশ্বাসের শব্দ আছে কি না

– নিঃশ্বাসের বাতাস গালে লাগছে কি না

– শ্বাস-প্রশ্বাস না পেলে সিপিআর শুরু করুন।

৫. বুকে চাপ (Chest Compressions) দিনঃ

– ভুক্তভোগীর বুকের মাঝখানে (নিপল লাইনের মাঝ বরাবর) দুই হাতের তালু একটার ওপর আরেকটা রেখে চাপ দিন।

– আপনার কনুই সোজা রাখুন, কাঁধ বুকের ওপরে রেখে শরীরের ওজন ব্যবহার করুন।

– প্রতি মিনিটে ১০০–১২০ বার গতিতে বুকের প্রায় ২ ইঞ্চি (৫ সেমি) গভীরে চাপ দিন।

– প্রত্যেক চাপের পর বুক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে দিন।

– গুনে গুনে ৩০ বার চাপ দিন (compressions)।

৭. মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দিন (Rescue Breaths)

– ৩০ বার চাপ দেওয়ার পর মাথা পেছনে ঠেলে চিবুক উঠিয়ে দিন (head tilt–chin lift)।

– নাক চেপে ধরে ভুক্তভোগীর মুখে আপনার মুখ লাগিয়ে ধীরে ধীরে ১ সেকেন্ডে দুইবার ফুঁ দিন।

– প্রতিটি শ্বাস দেওয়ার পর দেখুন বুক উঠছে কি না।

– শ্বাস দেওয়ার সময় বুক না উঠলে, মাথা-পজিশন ঠিক করে আবার দিন।

৮. চালিয়ে যান যতক্ষণ না সাহায্য আসে বা ভুক্তভোগী সাড়া দেয়

– CPR চক্র চালিয়ে যান: ৩০ বার বুকের চাপ + ২ বার শ্বাস।

যতক্ষণ না:

– ভুক্তভোগী সাড়া দিচ্ছে বা শ্বাস নিচ্ছে

– প্রশিক্ষিত সাহায্যকারী (EMT/Paramedic) এসে পৌঁছেছে

– আপনি অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন এবং চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না

গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

– শিশু বা নবজাতকের ক্ষেত্রে বুকের চাপ হালকা ও দুই আঙুল দিয়ে দেওয়া হয়।

– যদি মুখে শ্বাস দেওয়া সম্ভব না হয় (ঝুঁকি বা অস্বস্তি), তাহলে শুধু বুকের চাপ দিয়েও CPR চালিয়ে যেতে পারেন — একে বলে Hands-Only CPR।

– AED (Automated External Defibrillator) থাকলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করুন।

সঠিক সময়ে CPR প্রয়োগ আপনার হাতে ফিরিয়ে দিতে পারে একটি প্রাণ। শিখুন, শেখান, প্রয়োগ করুন

লেখক

ডা. এম শরীফুল আলম

কনসালটেন্ট, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

চেম্বার: আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০

হটলাইন: ১০৬৭২

Website: https://aalokhospitalbd.com

Dr-Shariful-Alam

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *